ads

অনলাইন সংগীত শিক্ষা : বাস্তবতা ও সম্ভাবনা (Part 4) ১.৩ প্রথাগত সংগীত শিক্ষা


অনলাইন সংগীত শিক্ষা : বাস্তবতা ও সম্ভাবনা (Part 4) ১.৩ প্রথাগত সংগীত শিক্ষা 


 

Ø ১.৩ প্রথাগত সংগীত শিক্ষা বনাম অনলাইন সংগীত শিক্ষা

সংগীত কাথাটির বুৎপত্তিগত অর্থ গান । প্রাচীন কালে গীত, বাদ্য ও নূত্যকে সংগীত বলা হত । কিন্তু আধুনিক কালে সংগীত বলতে শুধু গান বা কন্ঠ সংগীতকেই বোঝায় । নূত্য সম্পূর্ণ আলাদা ও স্বতন্ত্র কলা হিসাবে পরিগনিত হয় । বাদ্যকে আজকাল যন্ত্র সংগীত হিসেবে নির্দেশ করা হয় । শুধু কন্ঠ সংগীত ও যন্ত্রসংগীতই নয়, সংগীত বিষয়টির সাথে সম্পর্কিত ও অন্তভূক্ত বিভিন্ন বিষয় রয়েছে ।

পাশ্চাত্য সংগীতের ক্ষেত্রে সংগীতের ব্যপ্তি অনেক বেশি । তাদের শিক্ষাদান ও শিক্ষা গ্রহণেয় অনেক বিষয় রয়েছে । সেসব শিক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গবেষনালব্ধ পদ্বতি ব্যবহার করে থাকে । কিন্তু আমাদের ভরতীয় উপমহাদেশীয় সংগীত মূলত গুরুমুখী বিদ্যা । সম্প্রতি গুরুগৃহকে অতিক্রম করে সংগীত আভা স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সংগীতের বিভিন্ন শাখাতে পাঠদান ও ডিগ্রি প্রদান করে থাকে ।

বাংলাদেশে বিভিন্ন ইংরেজী মাধ্যম স্কুল ও শহরাঞ্চলের অন্যান্য বিদ্যালায়সমূহ, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত শেখানো হচ্ছে । বাংলাদেশের র্আগার র্গাওয়ে অবস্তিত সরকারি সংগীত কলেজ রয়েছে । সেখানে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে । সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সংগীত বিষয়ে অনার্স  ও মাস্টার্সসহ ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে থাকে । ভারতীয় উপমহাদেশীয় সংগীত তো বটেই আমাদের দেশীয় লোকসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুল সংগীত ও তবলা বিষয়েও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনার্স, মাস্টার্স ডিগ্রি দিয়ে থাকে । পাশাপাশি পাশ্চাত্য সংগীত, স্টাফ নোটেশন, সাউন্ড, মিজিকেলেজি, এথনোমিউজিক সহ বিশ্বমানের বিভিন্ন কোর্স চালু রয়েছে এবং প্রতিনিয়ত গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন বিষয় যুক্ত হচ্চে । বাংলাদেশের যে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সংগতি বিষয়ে ডিগ্রি প্রদান করে থাকে সেগুলোর নাম নিচে উল্লেখ করা হলো-

·        রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
·        ইউডা
·        শান্ত মারিয়াম ইউনিভর্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি

সংগীতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠান গুলো বাংলাদেশে বেশ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে । এই বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ছাড়াও আরো কিছু প্রতিষ্ঠান বা একাডেমী রয়েছে যারা সংগীতের প্রথাগত শিক্ষার ব্যাপারে সচেতন এবং সংগীত শিক্ষার মাধ্যমে সংগীতকে প্রসারিত করে যাচ্ছে । এরকম প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে রয়েছে ছায়ানট, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি. সুরের ধারা প্রভূতি । এছাড়া সরকারি উদ্যোগের প্রতিষ্ঠন গুলোর মধ্যে রয়েছে সারা দেশের প্রত্যেকটি জেলায় অবস্তিত জেলা শিল্পকলা একাডেমী, কেন্দ্রিয় ভাবে ঢাকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, নজরুলের সাহিত্য ও নজরুল সংগীত গবেষণা ও চর্চার প্রতিষ্ঠান নজরুল ইন্সটিটিউট প্রভূতি । প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠন ও একাডেমী গুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করছে ।

প্রথাগত শিক্ষা আমাদের দেশে মূলত গুরুমুখী । একসময় গুরুগৃহ একমাত্র সংগীত শিক্ষার আশ্রয়স্থাল হলেও বর্তমানে সেটি প্রাতিষ্ঠাানিক রুপ নিয়েছে এবং প্রসারিত হয়েই চলেছে । পাশ্চাত্য সংগীতে প্রতিষ্ঠানিকভাবে তাদের শিক্ষাকে স্মর্ট মনে করা হলেও আমাদের দেশে সরাসরি গুরুর কাছে, গুরুর হাত ধরে সংগীত জ্ঞান লাভ করার প্রথা রয়েছে । বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার দারুণ এ ধারাটি কমতে থাকলেও একসময় ভারতীয় কন্ঠসংগীত ও যন্ত্রসংগীত উভয়ের যে জটিল প্রিক্রিয়া, তা সরাসরি গুরুর কাছে না শিখলে শিক্ষালাভ বেশ কঠিন হয়ে পড়ে ।

১৮৬৮ সালে প্রকাশিত কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত প্রথম সংগীত শিক্ষা বিষয়ক গ্রন্থ। এতে কন্ঠ সংগীতের বিভিন্ন বিষয়সহ যন্ত্রসংগী বাজাবার বিভিন্ন নিয়ম ও উল্লেখ রয়েছে । এটিতে তাল-লয়ের বিবরণ, গ্রাম, ঠাট, স্বর, শ্রুতির বর্ণনা, কন্ঠ ও যন্ত্রসাধনের প্রণালী প্রভূতি সাংগীতিক বিষয় উল্লেখ রয়েছে । এরপর থেকে বাংলাদেশে সংগীত বিষয়ক প্রচুর গ্রন্থ রচিত হয়েছে, যাতে সংগীতের তাত্বিক বিষয় তো বটেই ব্যবহারিক বিভিন্ন দিকও উল্লেখ রয়েছে । এভাবে সংগীতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার উপাদান ও মানুষের চিন্তা-চেতনার বিকাশের সাথ সাথে সংগীত রুপ লাভ করেছে । ভরতীয় উপমহাদেশীয় সংগীতের ক্ষেত্রে প্রথাগত এই শিক্ষা ব্যবস্থাই এখন পর্যন্ত সর্বস্তরে বিশেষ জায়হা দখল করে আছে ।অন্যটিকে, অনলাইন সংগীত মিক্ষায় শিক্ষায় শিক্ষকের সরাসরি সান্নিধ্য লাভের সুয়োগ নেই । প্রথাগত ক্লাসরুমের বাইরে শিক্ষার্থী নিজস্ব পরিবেশ নিজের মত করে শিক্ষালাভ করে থাকে । শিক্ষার এ মাধ্যমে প্রথাগত শিক্ষার মত গুরুগৃহ বা প্রতিষ্ঠানে সশরীরে হাজির থাকতে হয়না ।

পাশ্চাত্য সংগীতের ক্ষেত্রে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারিত হলেও প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে তেমন প্রসার লাভ করেনি । বিশেষত আমেরিকায় অনলাইন সংগীত শিক্ষা বেশ কার্যকর ভাবেই প্রসার লাভ করেছে । অবশ্য ভারতীয় উপমহাদেশে কেউ কেউ চালু করার চেষ্ঠা করলেও তা অনলাইনে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ লাভ করতে সমর্থ হয়নি । আমাদের দেশীয় সংগীতের ধারণের কারণে আজও সম্পর্ণ প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল ।

ভারতীয় উপমহাদেশ এবং বাংলাদেশে বেশ কিছু ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে । যারা আমাদের দেশীয় সংগীতকে অনলাইনের মাধ্যমে বিনমূল্যে শিখতে পারে । এতে প্রথাগত নিয়ম অনুসরণ করে একজন শিক্ষার্থীকে শিখতে হয় না। নিচে কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেলের নাম উল্লেখ করা হলো, যারা সংগীত বিষয়ক বিভিন্ন লেসন তৈরী করে থাকেন-

ü Ajoy Chakraborty
ü Shankar Mahadevan Academy
ü e Music
ü Geethanjali
ü Alokita
ü Clickntech
ü Us Entertainment

No comments

Powered by Blogger.